বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগসহ বেশ কিছু প্রগতিশীল সংগঠন তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। তবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সুযোগ নিয়ে বুয়েটে গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে শিবিরসহ মৌলবাদী ছাত্র সংগঠনগুলো। গত বছরের ৩০ জুলাই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কাগজপত্র, সংগঠনের তহবিল-সংক্রান্ত প্রচারপত্র, সংগঠনের সাথি ও সদস্যদের পাঠযোগ্য সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের বুয়েট শাখার বায়তুল মাল সম্পাদক আফিফ আনোয়ার ছিলেন। এদিকে শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম স্বীকার করেছেন সংগঠনটি বুয়েটে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।
এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের (স্টুডেন্ট নং ২১০৪১৪১) হলের সিট বাতিল করা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা ইমতিয়াজ এর স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে আজও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
তবে বিভিন্ন সময় বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র শিবিরের কার্যক্রম সামনে আসলেও শিক্ষার্থীদের তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের শাস্তি দাবি করে কোন প্রতিবাদও হয়নি বুয়েটে। কিন্তু প্রতিবাদ হচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যের বিরুদ্ধে। যদিও ইমতিয়াজ বুয়েট ক্যাম্পাসে নয়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে জড়িত।
তাই অনেকে সম্প্রতি চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কথিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আড়াল থেকে শিবির ইন্ধন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তারা বলেছেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধী প্রেতাত্মাদের ক্যান্টনমেন্ট এখন বুয়েট। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের উচিত আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বুয়েটে তাঁদের সাংগঠনিক অবস্থান নিশ্চিত করা। নতুবা মৌলবাদের বীজের মহাবিস্ফোরণের দাবানলে আগামীর বাংলাদেশ সারাবিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
বুয়েটের সাবেক ছাত্র ও আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে যেই ৩০ জন বুয়েটের স্টুডেন্ট রাষ্ট্রবিরোধী মিটিং ও জমায়েত করতে যেয়ে গ্রেফতার হলো, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো - সেই ৩০ জনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য কোন আন্দোলন হলো না কেন? সেই ৩০ জনের মধ্যে থাকা ছেলেরা ফেসবুকে সরাসরি পোস্ট করছে এই আন্দোলন নিয়ে, তাহলে কি জেনেশুনে শিবিরের ছেলেদের নিয়ে এই আন্দোলন চালাচ্ছে বুয়েটের ছেলেমেয়েরা? তাহলে কি আমরা বলতে পারিনা, একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন করাচ্ছে শিবির ও হিজবুততাহারীর?
বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিব আহমেদ মুরাদ বলেন, জামায়াত-শিবির ও মৌলবাদী গোষ্ঠী এখানে আস্তানা গড়ে তুলেছে। আমরা থাকতে এই আস্তানা গড়ে উঠতে দেবো না। তারা সাধারণ শিক্ষার্থী সেজে বুয়েটকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মৌলবাদী গোষ্ঠীর কর্ম নিয়ে সচেতন হয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
জানা যায়, বুয়েটে শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে এখানকার অনেক শিক্ষকের ভালো সর্ম্পক রয়েছে। এদের কেউ কেউ আর্থিকভাবেও শিবিরকে সহায়তা করে। একইভাবে বুয়েট প্রশাসনেও শিবিরের প্রভাব রয়েছে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুয়েটের এক শিক্ষার্থী বাহান্ন নিউজকে বলেন, বুয়েট যেন
বাংলাদেশের ভেতর একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দীর্ঘ দিন যাবৎ বাংলাদেশের মাঝে ‘একখ- পাকিস্তান’ হয়ে আছে বুয়েট। ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা না থাকায় স্বাধীনতা বিরোধীদের সংগঠন শিবিরের ঘাঁটি বা আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
শিক্ষক ছাত্রদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের সংখ্যাধিক্য এতই বেশি যে, তাদের আদেশ-নির্দেশে সবই চলে আসছে। আমরা প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা এর অবসান চাই।
এদিকে বুয়েটে শিবির তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে স্বীকার করেছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর জামায়াতে সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'ছাত্র শিবির মেধাবীদের সংগঠন আর বুয়েট মেধাবীদের প্রতিষ্ঠান। মেধাবীদের প্রতিষ্ঠানে শিবিরের কার্যক্রম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বুয়েটে শিবিরের কার্যক্রম ছিল এখনো আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। সেখানে সাধারণ ছাত্ররা ছাত্রলীগকে বয়কট করেছে, তারা তাদের নিষিদ্ধ করেছে। সেখানে এখন ইসলামী মূল বোধের প্রশ্নে ইসলামী ছাত্র শিবির তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।'
সম্পাদকীয় ও বাণিজিক কার্যালয়: ব্লক: ই, সেক্টর: ১৫, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০
নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৬১৯৮৭৭১৫৭, ইমেইল: news@hotnews24.news
সম্পাদক ইমেইল: editor@hotnews24.news, বিশেষ প্রয়োজনে: hotnewslive24@gmail.com
কপিরাইট ©2006-2024 hotnews24.news