মো: সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
ভোলার বোরহানউদ্দীন উপজেলায় আধুনিক মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন, শসা ও মরিচ চাষ করে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন কৃষকরা। নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ফলে কৃষকদের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি, জীবনে এসেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবার ব্যাপকভাবে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এই পদ্ধতিতে কৃষিজমিতে পচনশিল উপকননে তৈরি প্লাস্টিকের আবরণ ব্যবহার করা হয়, যা মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে, আগাছার বিস্তার রোধ করে এবং রোগবালাই প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, সবজির গুণগত মানও থাকছে চমৎকার।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুরাদ হাসান চৌধুরী জানান, “মালচিং পদ্ধতি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এটি শুধু উৎপাদন বাড়ায় না, ফসলের গুণগত মানও উন্নত করে। এ প্রযুক্তির সুফল পেয়ে বোরহানউদ্দীনের কৃষকরা নতুন আশার আলো দেখছেন।”
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার কৃষি ইউনিট চলতি বছর মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের ফসলের চাষ প্রদর্শনী দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের এই উদ্যোগ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে এবং তারা এখন নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
বোরহানউদ্দীনের কৃষক শেখ ফরিদ বলেন, “গত বছর প্রচলিত পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছিলাম, কিন্তু ফলন আশানুরূপ হয়নি। এবার মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছি, ফলন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাজারেও ভালো দাম পাচ্ছি। এতে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে।”
কৃষক মো. মনির হোসেন বলেন, “আগে আগাছা পরিষ্কারের জন্য বাড়তি খরচ হতো, এখন সেটা লাগে না। পাশাপাশি ফসলের বৃদ্ধি খুব ভালো হয়েছে, দেখতে মন ভরে যায়।”
কৃষি বিভাগের উপপরিচালক ড. শামিম আহমেদ জানান, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। তিনি আরও বলেন, “মালচিং পদ্ধতি কৃষকদের জন্য বেশ লাভজনক এবং এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকদের মধ্যে এই পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।”
বোরহানউদ্দীনে মালচিং পদ্ধতির সফলতা দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন এবং আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে এই পদ্ধতিতে চাষের পরিকল্পনা করছেন।
মালচিং পদ্ধতির এই অভূতপূর্ব সফলতা কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পেলে আরও কৃষক এই পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং টেকসই কৃষির ভিত্তি গড়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।