মো: সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমূহ—ঢালচর, চরকুকরি-মুকরি, চরপাতিলা এবং পটুয়াখালী জেলার চরমন্তাজ—এখন আর আগের মতো যাতায়াত সমস্যা নিয়ে ভুগছে না। সম্প্রতি চরকচ্ছপিয়া লঞ্চঘাট থেকে ৪টি রুটে ৯টি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল শুরু করেছে। এতে পর্যটক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় কর্মজীবী মানুষজনের মাঝে ব্যাপক স্বস্তি ও উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। এ ব্যবস্থাকে ঘিরে দ্বীপাঞ্চলে অর্থনৈতিক ও পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এসব দ্বীপে প্রতিদিন একটি করে লঞ্চ চলত, যা চাহিদার তুলনায় ছিল অপ্রতুল। ফলে যাত্রীদের সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে অসুবিধা হতো। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন সাপেক্ষে স্থানীয়দের উদ্যোগে গত ৫ আগস্টের পর নতুন ৫টি লঞ্চ রুটে যুক্ত হয়। এখন প্রতিটি রুটে গড়ে এক ঘণ্টা অন্তর লঞ্চ চলাচল করছে, যা যাত্রীদের জন্য সময়, নিরাপত্তা ও আরাম নিশ্চিত করেছে।
চরকচ্ছপিয়া লঞ্চঘাটে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, একতলা বিশিষ্ট এমএল ঢালচর, এমএল সুফিয়া, এমভি মাসরাহ ও এমএল নিপু নামের লঞ্চগুলো নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে প্রস্তুত। যাত্রীরা কেউ লঞ্চে উঠছেন, কেউ মালামাল তুলছেন ব্যস্তভাবে।
চরকুকরি-মুকরির বাসিন্দা মো. ফয়েজ ও মো. মঞ্জুরুল আলম জানান, এই দ্বীপ একটি পর্যটন এলাকা হওয়ায় প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক আসেন। আগে মাত্র দুটি লঞ্চ থাকায় সময়মতো পৌঁছানো যেত না, ফলে পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হতো। বর্তমানে আরও দুটি লঞ্চ যুক্ত হওয়ায় এক ঘণ্টা পরপর চলাচল সম্ভব হচ্ছে, যা স্থানীয় কৃষিপণ্য ও সামুদ্রিক মাছ পরিবহনেও সুবিধা তৈরি করেছে।
ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, “নতুন লঞ্চ চালু হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য আনতে এখন ঝামেলা পোহাতে হয় না। পরিবহন খরচ ও ঝুঁকি দুই-ই কমেছে।”
ঢালচরের বাসিন্দা শরিফ ও শাহে আলম জানান, “আগে মাত্র একটি লঞ্চ চলত, তাতে দুর্ভোগ ছিল। এখন আরও একটি লঞ্চ চালু হওয়ায় পর্যটক, কর্মজীবী ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমেছে। মাছ পাঠানোও এখন সহজ।”
চরপাতিলার যাত্রী রহিমা বিবি ও ইউসুফ বলেন, “বর্ষাকালে যাতায়াত ছিল খুবই কষ্টকর। নতুন ট্রলার যুক্ত হওয়ায় এখন সহজেই পণ্য আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে।”
লঞ্চচালক মো. সোহাগ জানান, তার লঞ্চ এমএল ঢালচর প্রতিদিন দুপুর ১টায় চরকচ্ছপিয়া থেকে ছেড়ে ঢালচর পৌঁছায় ৩টায়। ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। অন্যদিকে চরকুকরি-মুকরি রুটের এমএল সুপ্তির চালক আল-আমিন বলেন, “আমাদের লঞ্চ প্রতিদিন দুপুর ১২টায় চরকুকরিতে পৌঁছে এবং দুপুর ১টায় ফেরে। ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা।”
স্পিডবোট চালক সুমন জানান, যাত্রী থাকলে স্পিডবোট চলে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ঢালচরে ৩০০ টাকা, চরকুকরি ও চরপাতিলায় ২০০ টাকা এবং চরমন্তাজে ২৫০ টাকা। লঞ্চ ভাড়া চরপাতিলায় ৫০ টাকা, চরমন্তাজে ১৪০ টাকা।
নতুন দুইটি লঞ্চের মালিক মো. সবুজ হাওলাদার বলেন, “দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করতে আমরা নতুন সার্ভিস চালু করেছি। যাত্রীদের ওঠানামার সুবিধার্থে দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক মাস্টারের আবেদনে বিআইডব্লিউটিএ চরকচ্ছপিয়ায় একটি পল্টুন স্থাপন করেছে।”
ফারুক মাস্টার বলেন, “আগে পর্যটকরা আসতেন না। এখন ৯টি লঞ্চ নিয়মিত চলায় পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি এসেছে। এই সার্ভিসগুলো টিকিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, “চরকচ্ছপিয়া থেকে ৪টি রুটে ৯টি লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, পুলিশি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”
সম্পাদকীয় ও বাণিজিক কার্যালয়: ব্লক: ই, সেক্টর: ১৫, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০
নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৬১৯৮৭৭১৫৭, ইমেইল: news@hotnews24.news
সম্পাদক ইমেইল: editor@hotnews24.news, বিশেষ প্রয়োজনে: hotnewslive24@gmail.com
কপিরাইট ©2006-2024 hotnews24.news