মোঃ সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর তাণ্ডবে সৃষ্ট অতিবৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চল যেন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টার অবিরাম বর্ষণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এই আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে লাখো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল সকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত এই মৌসুমের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পটুয়াখালীতে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ, যেখানে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নেমেছে। এর ঠিক পিছনেই রয়েছে বরগুনা, যেখানে ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি জনজীবনকে স্থবির করে দিয়েছে।
শুধু এই দুই জেলাতেই নয়, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার ও ফেনীর পরশুরামে ১৫৭ মিলিমিটার, নোয়াখালীর হাতিয়ায় ১৪৬ মিলিমিটার এবং জেলা সদরে ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ফেনী শহরে ১৩৪ মিলিমিটার, কক্সবাজারের টেকনাফে ১২৫ মিলিমিটার এবং পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও বাগেরহাটের মংলায় ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত জনদুর্ভোগকে আরও তীব্র করেছে।
গোপালগঞ্জ, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এই টানা বর্ষণে শহরে জলাবদ্ধতা ও গ্রামে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার একর জমির ফসল পানির নিচে চলে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
বন্যা পূর্বাখাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উপকূলীয় নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে এবং কিছু নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় স্থানী প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে এবং জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে।