ভোলা প্রতিনিধি
ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে পূর্ব শত্রুতার জেরে আল-আমিন নামে এক যুবককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরপরই હત্যাকারীরা রাজধানীতে গা ঢাকা না দিয়ে পালিয়ে যায় সুদূর ভোলায়, কিন্তু র্যাবের চৌকস গোয়েন্দা জাল এড়ানো সম্ভব হয়নি। এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারীসহ প্রধান দুই আসামিকে গ্রেফতার করে আবারও নিজেদের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ জুলাই, মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকার খালপাড় তখনো মানুষের আনাগোনায় মুখর। আনুমানিক ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভিকটিম আল-আমিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় অভিযুক্ত মোঃ মোশারফ হোসেন, মোঃ রিপন এবং তাদের অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন সহযোগী। প্রকাশ্য রাস্তায় আল-আমিনকে প্রথমে বেধড়ক মারধর করে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর হত্যার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের হাতে থাকা ধারালো সামুরাই (চাপাতি) দিয়ে চালানো হয় নারকীয় উল্লাস। হত্যাকারীরা আল-আমিনের ডান পায়ের হাঁটুর পেছনের রগ কেটে দেয় এবং ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের গোড়াও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। রক্তাক্ত ও নিথর দেহ রাস্তায় ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ঘাতকচক্র। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে পথেই যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ২৮ বছর বয়সী আল-আমিন।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের মা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং মোহাম্মদপুর থানায় মোশারফ ও রিপনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর থেকেই হত্যাকারীদের ধরতে একযোগে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব-২ এর একটি দল ঢাকার সম্ভাব্য স্থানগুলোতে নজরদারি শুরু করে। অন্যদিকে, আসামিদের গ্রামের বাড়ি ভোলায় হওয়ায় র্যাব-৮ এর ভোলা ক্যাম্পও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব নিশ্চিত হয়, আসামিরা ঢাকা ছেড়ে ভোলায় আত্মগোপন করেছে। এরপর আর এক মুহূর্ত দেরি না করে র্যাব-২, ঢাকা এবং র্যাব-৮, ভোলা ক্যাম্পের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী যৌথ দল গঠন করা হয়। গত ১৮ জুলাই ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানাধীন বেতুয়া লঞ্চঘাট এলাকায় র্যাব এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকেই হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই হোতা মোঃ মোশারফ হোসেন ও মোঃ রিপনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তারা।
এ বিষয়ে র্যাব-৮ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক অমিত হাসান জানান, “আসামিরা স্থান পরিবর্তন করে ভিন্ন জেলায় পালিয়ে গেলেও র্যাবের নজরদারি এড়াতে পারেনি। দ্রুততম সময়ে তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করেছি, অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বাকিদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
এই গ্রেফতার অভিযানে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং দেশের যেকোনো প্রান্তে সংঘটিত অপরাধ দমনে র্যাবের এমন জোরালো ভূমিকা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।