কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় দাবি পরিবর্তন কেনো? -প্রশ্ন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর

নবির মাহামুদ, নিজস্ব সংবাদ দাতা

কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাদের দাবি পরিবর্তন কেনো? -এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

আজ শনিবার (১৩ জুলাই) বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমসমায়িক বিষয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় তাদের দাবি পরিবর্তন করা হচ্ছে। আমরা সবাই জানি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আছে। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইসভা। এ তিনটি অঙ্গ কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে যদি ধারণা না থাকে তখনই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বারবার তারা দাবি পরিবর্তন করছে, একেকবার রাষ্ট্রের একেক অঙ্গের কাছ থেকে তারা দাবি জানাচ্ছে, এখানে মনে হচ্ছে তাদের সম্যকধারণার কিছুটা অভাব আছে।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে সরকারের জারি করা যে পরিপত্র বাতিল করা হয়েছিল তা পুনর্বহাল করতে হবে। এটি পুনর্বহাল করার ক্ষমতা শুধু বিচার বিভাগেরই আছে। কাজেই ধরে নেয়া যায়, বিচার বিভাগ, অর্থাৎ হাইকোর্ট ২০১৮ সালে সরকার ৎযে পরিপত্রটি বাতিল করেছিল, সেটি তারা হাইকোর্টের কাছে দাবি জানিয়েছিল পুনর্বহাল করার। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ রাস্তায় আন্দোলন করে পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। এটি পরিবর্তনের একমাত্র উপায়, সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করেছে এবং আইনী লড়াই শুরু হয়েছে, তখন সরকারের অবস্থান এবং আন্দোলনকারীদের অবস্থান একই হয়ে গেলো। আন্দোলনকারীরা তাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগও করলেন এবং সে সরকারে সাথে পক্ষভুক্ত হলো। অথচ, আন্দোলনকারীরা আবার তাদের দাবি পরিবর্তন করে বলা শুরু করলো যে, সরকারকে কমিশন গঠন করতে হবে। যখন সরকার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করে সর্বোচ্চ আদালতে আইনি প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেছে সে অবস্থায় কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করা বা সংস্কার করার ঘোষণা দেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা অসাংবিধানিক হবে। কিন্তু তারা (আন্দোলনকারীরা) সেই অসাংবিধানিক দাবি করা শুরু করলো। এর মধ্যে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বা স্ট্যটাস কো নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত সাবেজক্ট ম্যাটারের ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্ট্যাটাস কো আদেশ দিয়েছের এবং যার ফলে কোটা বিষয়ে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র আবার পুনর্বহাল হলো। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে এও বলা হয়েছে যে, হাইকোর্টের আদেশ অপারেশনে থাকলো না অর্থাৎ সরকারের পরিপত্র পুনর্বাহল হয়ে গেলো। আন্দোলনকারীদের সেই দাবি চার সপ্তাহের জন্য পূরণ হয়ে গেলো, যেটা তাদের প্রাথমিক দাবি ছিলো। সর্বোচ্চ আদালতও আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানিয়ে বলছে যে তাদের বক্তব্য পেশ করার জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ তথা সরকার যখন আদালতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিমাংসার পথে এগোচ্ছে তখন আন্দোলনকারীরা আবার তাদের দাবি পরিবর্তন করে বলা শুরু করে, বিচারবিভাগ নয়, নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে সমাধান চায়। অথচ, সর্বোচ্চ আদালতের প্রক্রিয়া পুরোপুরি সমাপ্ত না করে সরকার এ বিষয়ে কোনো কিছুই করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণাও দিতে পারবে না। এটি তো সবারই জানা।

তিনি আরো বলেন, কোটা বিষয়ে মূলত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ থেকে, আদালত কিংবা সংসদের বিষয় নয় এটি। সর্বশেষ যখন হাইকোর্ট বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের আংশিক প্রকাশ হলো, সে রায়ে হাইকোর্ট সরকার তথা নির্বাহী বিভাগকে কোটা সংস্কারের জন্য পরামর্শ দিয়েছে। তখন তাদের দাবি আবার পরিবর্তন হয়ে গেলো। এখন তারা দাবি করছে সংসদ বা আইনসভাকে আইন করতে হবে। প্রথমে আদালতের কাছে দাবি, তারপর নির্বাহী বিভাগের কাছে দাবি, তারপর এখন সংসদের কাছে দাবি। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতে তাদের যুক্তি উপস্থাপনেও এ বিষয়টি এনেছেন এবং আরো জোরালোভাবে আনবেন যে কোটা বিষয়ে নীতি বা পলিসি সিদ্ধান্ত নির্বাহী বিভাগেরই কাজ, এটি আদালতের নয়। কাজেই সংসদে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের দাবি একেবারেই অজ্ঞতাপ্রসূত।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের মাধ্যমে সরকারি পরিপত্র আবারো পুনর্বহাল হওয়ার পর, আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক দাবি পূরণ হওয়া, তাদের মৌলিক দাবি এবং সরকারের অবস্থান একই রকম প্রতীয়মান হওয়া সত্ত্বেও যারা বারবার দাবি পরিবর্তন করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে এবং এখনো আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ তৈরি করছে আমি মনে করি তারা কোটা পদ্ধতির সংস্কার চায় না, তাদের অন্য কোনো দুরভিসন্ধি আছে।

তিনি যোগ করেন, একটি স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, মেধা না কোটা, কোটা না মেধা, মেধা, মেধা। স্লোগানটি খুবই যৌক্তিক। আমি এ স্লোগানের পক্ষে। অবশ্যই মেধা। কিন্তু এই স্লোগানের মাধ্যমে যে বক্তব্য হাজির করা হচ্ছে সেখানে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। কোটায় নিয়োগের ক্ষেত্রেও মেধাবীদের বিবেচনা করা হচ্ছে। একটা পর্যায় পর্যন্ত মেধার মাধ্যমে বাছাই করা হচ্ছে। কোটার বিপক্ষে যখন মেধাকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটি অসত্য বলা হচ্ছে কারণ কোটার সুবিধা পাওয়ার জন্য মেধাতালিকায় যেতে হচ্ছে। যে কারণে পৃথিবীর সবদেশেই কোটা ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজন। বৈষম্য দূর করার জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক বিবেচনা প্রয়োজন। কোটা বৈষম্য তৈরি করেনা। কোটার উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বৈষম্য নিরসন। সরকার বৈষম্যের নিরসন করে মেধার মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করছে।

তিনি আরো যোগ করেন, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা মেধার মূল্যায়ন চায়। এ স্পিরিটের সাথে আমি একমত। কিন্তু মেধার মূল্যায়ন করতে গিয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, যারা নিগৃহিত, বঞ্চণার শিকার, যারা এ দেশ তৈরি করেছেন সে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার যাতে

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Facebook
WhatsApp
Telegram
Twitter
LinkedIn
Email
Print

আরও পড়ুনঃ

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাত: ভূমিধসে ১ জন নিহত, ১০০+ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট দক্ষিণ কোরিয়ায় টানা ভারী বর্ষণে ভূমিধস

মৌলভীবাজারে জুলাই শহীদ দিবস পালিত

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মৌলভীবাজার জেলা

কুলাউড়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃ*ত্যু

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া

ময়ুর মিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন, মূল আসামি গ্রেপ্তার

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মৌলভীবাজার জেলার

জন্মের পর কাঁচা রাস্তা,পাকা রাস্তা কি স্বপ্ন!

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি স্বাধীনতার পাঁচ দশক

প্রধান সংবাদ

“দ্বীপের রানী ভোলায় আমরা করি বসবাস”: ভোলার মানুষের মুখে মুখে নতুন গান

মোঃ সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি সম্প্রতি “আমরা

ভোলায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ২৩ হাজার ৭০০ জন

নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন সারা

পটুয়াখালীর ২২ গ্রামে আগাম ঈদ উদযাপন, উৎসবে মাতোয়ারা গ্রামবাসী

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পটুয়াখালীর ২২ গ্রামের প্রায়

লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের রঙিন স্বপ্ন

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সূর্যমুখী চাষ: কৃষি অভিযোজনের

মায়েদের উৎসাহিত করতে ভোলায় মা সমাবেশ

মোঃ সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি ভোলা সদর উপজেলার

ডেস্ক রিপোর্ট বিশ্বখ্যাত চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া’র প্রধান নির্বাহী জেনসেন...

বেইজিংয়ে চীনা এআই মডেলকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ স্বীকৃতি দিলেন এনভিডিয়া সিইও জেনসেন হুয়াং

ডেস্ক রিপোর্ট আইসল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির নতুন করে অগ্ন্যুৎপাত...

দক্ষিণ-পশ্চিম আইসল্যান্ডে ফের আগ্নেয়গিরির উদগিরণ: ২০২১ সালের পর ১২তম বার, ঝুঁকিতে স্থানীয় জনপদ ও পর্যটন কেন্দ্র